সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা একটা বড় রকমের দায়িত্ববোধের ব্যাপার। এই পৃথিবীর প্রতিটি জীব জন্মসূত্রেই দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হয়ে জন্ম নেয়। সৃষ্টির সেরা জীব আমরা এই মানুষেরা হয়ত দলবদ্ধ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারি না; কিন্তু যার যার অবস্থানে থেকে নিজের অজান্তে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু কাজের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালন করি সব সময়। হয়ত আমরা কেউ সেভাবে এটা খেয়াল করি; কিংবা কেউ করি না।

আমাদের শুরুটাও প্রথমে সেরকমই হয়েছিল। “দেশের তথা সমাজের জন্যে কিছু একটা করা দরকার”- এই জাতীয় মানসিকতা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু কাজ আমরা শুরু করেছিলাম। শুরুতে সবাই যা করে অনেকটা সেরকমই। মেধাবী অথচ দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তিপ্রদান, বিপদগ্রস্থ পাশে থাকা, গরীবকে সাহায্য প্রদান করা, কাউকে চিকিৎসা সাহায্য দেয়া, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার পাশে থাকা, শীতবস্ত্র বিতরন, কাঙ্গালী ভোজ সহ নানাবিধ সমাজ সেবামূলক কাজ আমরা করেছি অনেকবার অনেকভাবে।

একটা পর্যায়ে মনে হয়েছে এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু না করে লক্ষ্য স্থির করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আগানো দরকার। সেই চিন্তা থেকেই সিমেক গ্রুপের সহযোগীতায় সিমেক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তুলতেই তাঁর এই উদ্যোগ।

সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখতে দীর্ঘ বছর ধরে সিমেক ফাউন্ডেশন নিজস্ব কর্মীদের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ নাগরিক সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ফাউন্ডেশন এর সকল কার্যক্রম এককভাবে সিমেক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও উদ্ভাবনমূলক কাজে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশন এর মূল লক্ষ্য হল, সামাজিক শিক্ষা প্রদান তথা প্রসারের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজে লাগানো, যাতে তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, প্রশাসনিক সেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্যের শিকার না হন। বরং জীবন ধারণের প্রতিটি প্রেক্ষাপটে যাতে অধিকার সচেতনতা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের সত্যিকার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারে।

মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায় হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ। বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় শিক্ষাক্রম এখনো পর্যাপ্ত গবেষণার উর্ধ্বে নয়। সিমেক ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এর অন্যতম পদ্ধতি হলো, মানুষকে সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে, ‘সামাজিক মানুষ’ হয়ে না গড়ে উঠতে পারলে কোন মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতি দায়বদ্ধ হতে পারে না। এমনকি, সমাজের কোন কল্যাণে অবদান রাখতে পারে না।

“সামাজিক শিক্ষা” গ্রহণের সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সবাই সমানভাবে একই মূল্যবোধে এবং একই কারিকুলামে শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের বিভিন্ন অনুশীলন করতে পারে। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি ফিলান্থ্রফিক ফাউন্ডেশন হিসেবে, সিমেক এর উদ্দেশ্য হল, নির্দিষ্ট একটি জনপদের সকলকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা যা রাষ্ট্রের যেকোনো প্রান্তে, যে কোন জনপদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। সেই সাথে, সামাজিক মানুষ তৈরিতে বর্তমান শিক্ষাক্রমে সামাজিক শিক্ষার ব্যাপকতা এবং গুরুত্ব সরকার তথা রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরতে পারে।

চেয়ারম্যান

বার্তা

ইঞ্জিনিয়ার সরদার মোঃ শাহীন

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

একটি ছোট্ট বিশ্বাস আমি সর্বদা মনের মধ্যে এভাবে লালন করি যে, এই পৃথিবীতে জন্মেছি কেবল একটি বারের জন্যে। আর মৃত্যুও হবে কেবল একবারই। মৃত্যুর পর ক্ষণজন্মা এই জীবন আর ফিরে পাবো না কখনোই। ফিরে আসা যাবে না এই সুন্দর পৃথিবীতে কোনভাবেই। কাজেই, ভাল যা কিছু করার এক জনমেই করতে হবে।

আমি জন্মেছি গাঁও গেরামে; শৈশব এবং কৈশোরও কাটিয়েছি এখানেই। শুধু আমি নই; আমার মত এই বাংলার অধিকাংশ মানুষই কাটিয়েছে গাঁও গেরামে। আমরা সবাই বাংলার মাটি ও মানুষের কাছে ঋণী। মাটির তৈরী মানুষেরা মৃত্যুর পরে এই মাটিতেই জায়গা নেবে। চিরতরে এই মাটির কোলে আশ্রয় নেবার আগে মাটির সেই ঋণ শোধের একটা সামান্য প্রচেষ্টা থেকে আমার শৈশব এবং কৈশোরের স্মৃতিমাখা এই গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের কল্যানে নিজেকে নিবেদিত করার প্রয়াসে “সিমেক ফাউন্ডেশন” এর এই পথচলা।

গ্রাম বাংলা হলো বাংলা মায়ের প্রকৃত রুপ। বাংলাকে গড়তে হলে, বাংলাকে দাঁড়াতে হলে গ্রাম বাংলা নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে, বাংলাকে রাঙ্গাতে হলে বাঙালীকে সাজাতে হবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি হিসেবে। সর্বদা দেশ হতে দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে এইটুকু বুঝেছি যে আমার গাঁয়ের মানুষেরা বঞ্চিত আধুনিক শিক্ষা এবং প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে। এই সব মানুষদের যদি সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, যদি আধুনিক চিকিৎসার নূন্যতম সেবা দেয়া যায়, তাহলে তারাই একদিন সবাই মিলে নিজেরাই নিজেদের গ্রামকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবে।

এমনি এক সমৃদ্ধ গ্রাম বাংলার স্বপ্ন বুকে লালন করছি আমি বহু বছর ধরেই। বিশাল এই পৃথিবীতে যখন, যেখানে এবং যেভাবেই থাকি, গ্রাম বাংলা থেকে যত দূরেই থাকি, সারাক্ষন এই স্বপ্নমাখা ঘোরের মধ্যেই থাকি। হোক না এ কেবলই আমার নিভৃত ভাবনা, কেবলই স্বপ্নের ঘোর! কিন্তু এই ভাবনার স্বপ্নে বসবাসই আমাকে দেশ সেবার প্রেরনা যোগায় সারাটিক্ষণ।

জানিনা এই এক জনমে দেশের সেবা কতটুকু করে যেতে পারবো! জানি না সেই সমৃদ্ধ গ্রাম এই জনমে দেখা হবে কিনা! হয়ত দেখা হবে, হয়ত হবে না! তবুও দুঃখ কিসের!! সান্ত্বনা এইটুকু তো থাকবে যে অন্তত একটি ভাল কাজের শুরুটা করে দিয়ে গেলাম!!!